অভিনেতা স্মরণ সাহার অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা!
অভিনেতা স্মরণ সাহার অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা!
নিউজক্যাম্প২৪ রিপোর্ট:
গত ০২ ডিসেম্বর ২০১৯ নাট্যাঙ্গনের দাপুটে অভিনেতা ও সংগঠক সাভারের প্রিয়মুখ সাভার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জনপ্রিয় নাট্য সংগঠন জাগরণী থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক জনাব স্মরণ সাহা অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে। বিষয়টি সাভারের টক অব দি টাউনে পরিণত হয়েছে।অনেকেই তার এ আচমকা ঘোষণায় বিস্মিত হয়েছেন। অনেকে উক্ত স্ট্যাটাসের কমেন্টে তার ঘোষণা পরিবর্তনের অনুরোধ করেন। বিষয়টি আমাদের প্রতিনিধির নজরে আসে। দিনভর স্মরণ সাহার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। অবশেষে টেলিফোনে তার সাথে কথা হয়। ঘোষণার পক্ষে তিনি তার বক্তব্য প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন ১৯৮৭-২০১৯ দীর্ঘ ৩২ বছর থিয়েটার করার পর অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা তার জন্য অত্যন্ত কষ্টের। তারপরও এ ঘোষণা তাকে দিতে হয়েছে। থিয়েটার তথা সুস্থ্য সংস্কৃতির বিকাশে অনেক বড় স্বপ্ন দেখেন তিনি। জোটের সাধারণ সম্পাদক সাভারে তিনি সাংস্কৃতিক জাগরণ তৈরী করেছেন তিনি। তাকে দেখে থিয়েটারে আগ্রহী হচ্ছে সাভারের শত শত শিক্ষার্থী। তিনি চান না তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত। যেখানে একটি মহড়া কক্ষ নেই, একটি মন্চ নেই, একটা হল নেই সেখানে অভিনয় করে, দেশের জন্য নাটক করে! – এভাবেই ক্ষোভের কথা জানান তিনি। তিনি বলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং মাননীয় সংসদ সদস্য ডা. মো. এনামুর রহমান এর ইচ্ছা এবং ঘোষণার পর সাভার থানার পাশে বংশী নদীর তীরে সাভার শিল্পকলা ভবনের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হয় কিন্তু কে বা কারা রাতের অন্ধকারে তা গুডিয়ে দেয়। পরবর্তীতে সাভারের মাননীয় সংসদ সদস্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনীলয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনায় উপজেলা নির্বাহী মহোদয়ের নেতৃত্বে ঢাকা- আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন রাজালাখ ফার্মের সামনে শিল্পকলা ভবনের জন্য স্থান বরাদ্ধ পূর্বক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। তাও রাতের অন্ধকারে কে বা কারা ভেঙে দেয়। এর কোন বিচার নেই, কোন সুরাহা নেই, কোন পদক্ষেপ নেই। একজন সংস্কৃতি কর্মী অভিনয় শিল্পী হিসেবে বিষয়টি মেনে নেয়া খুবই কষ্টের। সংস্কৃতি বান্ধব সরকার, সংস্কৃতি বান্ধব প্রশাসন অথচ সংস্কৃতি বিরোধী, স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির কাছে মাথানত করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আপাদমস্তক প্রগতিশীল এ মানুষটি জানান তিনি আজীবন সুস্থ্য সংস্কৃতির পক্ষে, প্রগতির পক্ষে কাজ করেছেন তিনি। ১৯৮৭-১৯৯৫ দীর্ঘ ৮ বছর যুক্ত ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে। ১৯৯৩-৯৪ শিক্ষাবর্ষে ফরিদপুর সরকারী রাজেন্দ্র কলেজ ছাত্র সংসদে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। অভিনয়ের জন্য রাজনীতি ছেড়েছেন তিনি। অথচ এখানে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু না করতে পারার ব্যাথা তাকে সবসময় কাঁদায়।
সম্প্রতি সাভারে তার নেতৃত্বে গ্রুপ থিয়েটার দিবস উপলক্ষে ৭১ প্রদীপ প্রজ্জলন ও শিল্পকলা একাডেমি ভবনের দাবীতে আলোর মিছিল পরিচালিত হয়। উক্ত মিছিল ঢাকা- আরিচা মহাসড়কে থানা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রতিকী অবরোধ শেষে স্থানীয় বঙ্গবন্ধু চত্ত্বরে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি। শিল্পকলা একাডেমি ভবন স্থাপন না হলে আগামী ১৫ ডিসেম্বর তারিখে মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন তিনি। এতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হন তিনি। হন টেলিফোনিক হুমকি, ধামকী এর স্বীকার। এখানেও তেমন আশা দেখছেন না তিনি। মূলত: এসব কারনেই অভিনয় ছাড়ার সিদ্ধান্ত তার।
বিষয়টিকে সাভারের কোন সংস্কৃতিকর্মীই মেনে নিতে পারছেন না। অনেকেই মনে করেন এমনটা ঘটলে সাভারে একটা সাংস্কৃতিক শূন্যতার সৃষ্টি হবে।