“আমি হয়ত মরেই যাবো”
“আমি হয়ত মরেই যাবো”
জন্ম : ৩১ জানুয়ারী, ১৯৪৩, ডাঙ্গা, শৈলকুপা, ঝিনাইদহ। মৃত্যু : ২৬ নভেম্বর, ২০১৯
প্রিয় কবির আত্মা শান্তিতে থাকুক…গভীর শ্রদ্ধা
পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা।
নীচের তথ্য গুলো বর্তমান সংকলনের জন্য সংগ্রহ করা হলো মৃত্যুর ৪ দিন আগে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে ভর্তি অবস্থায় শেখ সামসুল হক ভাইকে ফোনে বললেন। কবিতাটি আগে একবার ছেপেছিলাম একটা সংকলনে। এটাই আবার নিলাম। ভাবলাম অন্য কবিতা পেলে পরিবর্তন করে দিবো। সামসু ভাইকে বললাম রবিউল ভাইর পরিচিতি দরকার। তিনি ফোন করলেন। কবি রবিউল হুসাইন ফোন ধরলেন। পরিচিতির সংক্ষিপ্ত তথ্য দিলেন। বাকীটা তিনি হাসপাতাল থেকে ফিরে অফিসে গেলে তখন কবিতা এবং জীবনীটাও দিবেন বললেন। এরপর সামসু ভাইকে বললেন : “আমি আর এগুলো দেয়ার কথা ভাবছি না। আমি হয়ত মরেই যাবো ।
সামসু ভাই সাথে সাথে আমাকে জানালেন। দেখতে যেতে চাইলাম। সামসু ভাই বললেন আইসিইউতে কথা বেশী বলেন না। বেশীর ভাগ ঘুমিয়ে থাকেন। দেখতে গেলে একটু স্বাভাবিক হোক তখন যাবেন। তারপর আর আমাদের যাওয়া হলো না। সারাদিন কি বিষন্নতা ছিল। রবিউল ভাইর সারল্য মুখের স্নেহমাখা হাসি, আমাদের সাথে গল্প, হাসি তামাশা যেনো আমাদেরই বয়েসি তিনি। অত্যন্ত ধৈর্য্য নিয়ে কবিতা শুনতেন। ছবি তুলতে চাইলে নিজেই সবাইকে নিয়ে সুন্দর করে দাড়িয়ে যেনো একটা আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতেন।
পরিচিতি : কবি ও স্থপতি। জন্ম :-৩১ জানুয়ারী, ১৯৪৩, ডাঙ্গা, শৈলকুপা, ঝিনাইদহ। মা- প্রয়াত বেগম লুৎফুন্নেছা। বাবা-প্রয়াত তোফাজ্জল হুসাইন। বিদ্যা-স্থাপত্য বিদ্যায় স্নাতক-বুয়েট। প্রথম গ্রন্থ প্রকাশ : সুন্দরী ফণা (১৯৮৪)। পেশা : স্থপতি ও লেখালেখি। বিদেশ ভ্রমণ: বহুদেশ। সুন্দরী ফণা (১৯৮৪), কোথায় আমার নভোযান, কেন্দ্রধ্বনিতে বেজে ওঠে (১৯৯৬) উল্লেখযোগ্য ।
“মধুমাছি”
রবিউল হুসাইন
এখনো কথাগুলো মৌমাছি হয়ে ওড়ে প্রতিস্বরে
আর অহেতুকী আগুনে তাদের পাখাদুটি পোড়ে
কী যে সেই তীব্র আকর্ষণ কেউ বোঝে না
অন্ধকারেও নক্সা আঁকে সব বর্ণালী আলপনা
মধুরা ফুলে থাকে নিশ্চুপ নীরবে গোপনে
মৌ মৌ উড়ে উড়ে ফুলে ফুলে গড়ে মধুবনে
ফুলপাখি মৌচাক মৌমাছি মধুগ্রাম গড়ে
ডালে ডালে গুন গুন সঙ্গীতের সুর উপচে পড়ে
আগুনের শাদা ধোঁয়া চারদিকে মেঘাচ্ছন্নে
মধুমাছি দিশেহারা মৌবাড়ি ছেড়ে চলে নিঃশূন্যে
সবকিছু কেড়ে নেয় যাবতীয় মধুর ভান্ডার
মধুকর মধুকরী মধুকোষে জ্বালায় মধুথবর্তিকা অপার
সেই আলোতে উজ্জ্বল চারদিক প্রকৃতি অপরূপা
ফুলমধু মৌমাছি মৌচাক মধুলেহী মধুলোলুপা
ফুলে ফুলে মধু নিয়ে মৌমাছি মৌচাক বানায়
মৌয়াল লুটে নেয় জোর করে, সেইসব মৌ নিরূপায়।
১৯৪৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকূপার রতিডাঙা গ্রামে জন্ম রবিউল হুসাইন একাধারে কবি, স্থপতি, গল্পকার, শিল্প সমালোচক, প্রাবন্ধিক ও সংস্কৃতিকর্মী ছিলেন। ২০১৮ সালে ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পান একুশে পদক।
কবিতা, উপন্যাস ও প্রবন্ধ- সব মিলিয়ে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২৫টি।
তিনি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য। এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ক্রিটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
কবি রবিউল হুসাইনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বইয়ের মধ্যে রয়েছে-
কী আছে এই অন্ধকারের গভীরে
আরও উনত্রিশটি চাঁদ
স্থিরবিন্দুর মোহন সংকট
কর্পূরের ডানাঅলা পাখি
আমগ্ন কাটাকুটি খেলা
বিষুবরেখা
দুর্দান্ত
অমনিবাস
কবিতাপুঞ্জ
স্বপ্নের সাহসী মানুষেরা
যে নদী রাত্রির
এইসব নীল অপমান
অপ্রয়োজনীয় প্রবন্ধ
দুরন্ত কিশোর
বাংলাদেশের স্থাপত্য সংস্কৃতি
নির্বাচিত কবিতা
গল্পগাথা
ছড়িয়ে দিলাম ছড়াগুলি
“প্রত্যাবর্তন”
রীনা তালুকদার
সকল মৃত্যুই পৃথিবীকে আহত করে
মানুষ কাঁদলে স্বয়ংক্রিয় আই ল্যাক্রিমাল গ্রন্থি
জল উৎপাদন করে চলে
পৃথিবী কাঁদলে জল ভাসে গভীর কালো মেঘে
যাবার যার সে যাবেই; জানে সবাই
জানা বিষয় তবু অজানার গভীরে
তবু মানতে চায় না বুকচেঁড়া আর্তনাদ
এইতো যেন সব আছে ঠিক; ধ্রুপদী জীবনের রঙ
মানুষের বিবর্তন রূপ মানুষ, উদ্ভিদ, আলো
এই নিয়েই জগত সংসার উজ্জ্বল
মুহূর্তেই অদূর স্পর্শ মৃত্যুর নিয়মে
জগতের ভয়ংকর ভয়ের উপলব্ধি ছেড়ে
শিল্পের মহত্তর নিপুণতায়
মৃত্যুর চিত্রকলা চিত্রিত হয় চির চেনা মানুষের কাছে
সৃষ্টির ইতিহাসকে পূর্ণতা দিতে দিতে
মৃত্তিকার সহিষ্ণু হাতে বিছিয়ে দিতে হয়
মায়ামোহময় মানুষের দেহ
দূরত্ব বেড়ে যায় মাটি আর নক্ষত্রলোকের
যাকে কোনো নামে ডাকা যায় না আর
আঁধারের ভেতর থেকে এসে
আঁধারে জরায়ুতে প্রত্যাবর্তন
মানুষ নয় আসলেইতো এক একটি লাশ !